কিছু কিছু শব্দ মানুষের যাপনের সাথে মিশে থাকে, মিশে থাকে শহরের যাপনের সাথেও। যেমন আটপৌরে শব্দটা, বীরভূমের যাপনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে নিটোল স্নিগ্ধ এই উচ্চারণ। আর সেই উচ্চারণ মাথায় রেখে সহজ আটপৌরে পোশাক তৈরি করছেন শ্রেয়সী। এসআরডি বা শ্রেয়সী রাকা দাস- এই নামেই নিজের ক্লোদিং লাইন শুরু করেছেন সদ্য স্নাতকোত্তর পাস করা ইতিহাসের এই ছাত্রী।
ইতিহাস পড়তে পড়তে হঠাৎ ফ্যাশন ডিজাইনিং-এ কেন?
এই প্রশ্নটা হামেশাই শুনতে হয় শ্রেয়সীকে। যদিও ছোট থেকেই পোশাক বিষয়টা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে ভালোবাসতেন শ্রেয়সী। “আমার দিদা ফ্যাশন ডিজাইনার ছিলেন। 1965-70 এর সময় শান্তিনিকেতনে বাটিকের উপর বা কাঁথা সেলাইয়ের উপর ভিত্তি করে পোশাক তৈরি করতেন তিনি। আমি যেটুকু সেলাই শিখেছি, বা ডিজাইন করার হাতেখড়ি সবটা দিদার কাছেই।”- বলেন শ্রেয়সী। তবে নিজের ডিজাইন করা কাপড় বা জামায় তাঁর পছন্দের উপকরণ কিন্তু খেশ বা খাদিই। তাঁর কথায়, “আমরা যে জলবায়ুর মানুষ তাতে আমাদের পোশাকের মূল কথা হওয়া উচিৎ আরাম। আর খেশ একেবারেই বীরভূমের নিজস্ব উপকরণ। আমি চাই পরিবেশ বান্ধব কাপড় হোক, তাতে নিজেরও আরাম আর পরিবেশেরও।” শ্রেয়সীর ডিজাইন করা পোশাকের উপকরণ থেকে শুরু করে তার রঙ এমনকি নকশা- সবেতেই গহন ছাপ পরিবেশের। শান্তিনিকেতনের লাল মাটি, হলুদ অমলতাস, আগুন পলাশ আর জংলা সবুজ এই সবই ঘুরে ফিরে আসে তাঁর ‘জামা’য়। হ্যাঁ, নিজের পোশাককে ‘জামা’ বলেই ডাকেন শ্রেয়সী।
“আমি যে মানুষের কথা ভেবে কাজ করি, তাঁরা সবাই সাধারণ মধ্যবিত্ত। আমরা তো সালোয়ার হোক বা ফ্রক সবকিছুকেই জামা বলতেই পছন্দ করি। পুজোর জামা বলতে তাতে শাড়িও ঢুকে পড়ে আবার পাঞ্জাবীও।” জানান শ্রেয়সী। এই পুজোতেও খেশ আর খাদির মিশ্রণ করেই বীরভূমি শাড়ি তৈরি করছেন তিনি। প্রাকৃতিক রঙ দিয়েই কাজ করেন তিনি। শাড়ির পাশাপাশি ফ্রক আর ব্লাউজ নিয়েও একের পর এক পরীক্ষানিরীক্ষা করে চলেছেন শ্রেয়সী। ঝাড়বাতি জামা আর অরণ্য জামা, সহজ জামা যার অন্যতম উদাহরণ। তাঁর কথায়, “এই জামার হাত গুলো যেমন উল্টানো ঝাড়লণ্ঠনের আকারে, অরণ্য জামার মূল কথাই হল পরিবেশ, জঙ্গলের লতা পাতার ডিজাইন বা একরঙা জংলা সবুজ- আমার পোশাক মূলত আরামের জন্য আর সব বয়সের সবার জন্য।”
সব বয়সের সবার কথা বলতে শ্রেয়সী কিন্তু শুধু পুরুষ বা মহিলাদের কথাই বলছেন না। ফ্যাশনের কোনও লিঙ্গবিভেদ হতে পারে না একথা বিশ্বাস করেন বলেই ট্রান্সসেক্সুয়াল মানুষদের জন্যও ফ্যাশনের কাজ করছেন তিনি। “আমাদের সমাজ এখনও ততটা পরিণত হয়নি যেখানে ইচ্ছে করলে একটি শারীরিকভাবে পুরুষ যিনি তিনিও স্কার্ট বা শাড়ি পরে বেরোতে পারবেন। অথচ ফ্যশন বিষয়টা সত্যিই আরও লিবারাল হওয়া প্রয়োজন। আমি চেষ্টা করি এলজিবিটিকিউ মানুষদের জন্যও পোশাক বানাতে, যেখানে তাঁদের চাহিদা বা তাঁদের ইচ্ছার কথাই ফুটে উঠবে।”
অনলাইনেই পোশাকের অর্ডার নেন শ্রেয়সী, ইচ্ছামতো মাপে পছন্দসই এক্সক্লুসিভ পরিবেশ বান্ধব পোশাক বানিয়ে দেন শান্তিনিকেতনের শ্রেয়সী। ভাবছেন দামের কথা? ‘সহজ জামা’ মতোই দামখানিও সবার জন্য সহজ করেই রেখেছেন ফ্যাশনের উঠোনে নবাগতা এই ডিজাইনার।
© Copyright NDTV Convergence Limited 2025. All rights reserved.