Suman Chakraborty
বিশ্বকর্মা পুজোর কাটা ঘুড়ি, সারাটা বছর ধরে স্কুলের পকেট ম্যানি থেকে জমানো পয়সা, দিয়ে শুরু হোত আমার আগমনির আগাম দিন গোনা। দুর্গা পুজো মানেই মামার বাড়ি, বামনগাছির এই পুজো প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের পুরোন। এক চলা টালির দুর্গা দালান আজও সেই অঞ্চলের মানুষের আবেগ, আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও নিষ্ঠার পূর্ণ প্রতীক। ঠাকুর দালানে জন্মাষ্টমীর পুজোর সাথে সাথে মাতৃ প্রতিমার কাঠামো পুজো করে ঠাকুর বানানোর কাজ শুরু করা হতো। একটা একটা করে দিন চলে যায়, প্রথমে বিচুলি দিয়ে কাঠামো, তারপর মাটির প্রলেপ, তারপরে রঙের ছোঁয়া। সেই রঙের ছোঁয়ায় বামন পাড়ার মুখার্জি পরিবারের মানুষদের মনও রাঙিয়ে উঠত।
কথিত আছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আমল থেকে এই পুজোর সূচনা। একটা ঢাকি, একটা কাঁসর, আর একটা দুটো বাল্বের আলোতেই কেটে যেত সম্পূর্ণ পুজোটা। হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির মন্ত্র আজও প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে গর্ভের ইঙ্গিত যোগায়। বোধনে ধুতি পরে মাকে বেদিতে তোলা, পুজোর দিন গুলিতে প্রত্যেক পরিবারের একজন সদস্যের ঠাকুর দালানা বসে মায়ের ভোগ খাওয়া, প্রতিদিন স্নান করে একসাথে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া, মহাষ্টমীতে একশো আটটা প্রদীপের সলতে পাকিয়ে প্রদীপ জ্বালানো, দশমীতে পান্তা ভোগ, আজ সবই অতীত। পুজো কাটত একটা বা দুটো জামা সম্বল করে, ক্যাপ ফাটিয়ে, লুকোচুরি খেলে। সেই সঙ্গে ছিল দাদু-দিদা ও মামাতো ভাইদের সাথে আনন্দ। সারা বছর ধরে ঘটে যে টুকু পয়সা সঞ্চয় করে রাখতে পারতাম তাই দিয়েই কাটত পুজোর চারদিনের আনন্দ। ঘট ভাঙা পয়সা সম্বল করে মামী ও ছোট ভাইদের সাথে ঠাকুর দেখতে যাওয়া, এগরোল খাওয়া, আজ সবই নস্টালজিক অনুভূতি।
জীবনের অনেক গুলো বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো। আজ শহরের উপচে পড়া ভিড়, ঝলমলে রোশনাই আলো, ডিজে মিউজিক, কত গুলো ব্যান্ডেড জামা কাপড়, আর বিভিন্ন রেঁস্তোরার নাম না জানা খাবার খেয়ে পুত্র-পরিবার, বন্ধুদের সাথে ভালোই কাটে পুজো।
কিন্তু মন আজ চায় সেই ঢাকের আওয়াজ। বলিদানের পর খাঁড়া ধোয়া জল। খালি পায়ে প্রতিমা বিসর্জন। বিজয়ার পর গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে নারকোল নাড়ু খাওয়া। সেই সাথে এই মন ভীষণ ভাবে প্রত্যাশা করে আমার দিদার মুখের চিবানো পান, আর দাদুর বাম হাতের বুড়ো আঙুলের বড়ো নখ দিয়ে পিঠে সুরসুরি!
DISCLAIMER (প্রত্যাখ্যান) : এই ব্লগে লেখক নিজের বিচারধারা ব্যক্ত করেছেন। এই নিবন্ধের মধ্যে যে বক্তব্য পেশ করা আছে তার জন্য NDTV কোনো ভাবেই দায়ী নয়। নিবন্ধে যে তথ্য বা মনোভাব ব্যক্ত করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভাবেই লেখকের নিজেস্ব চিন্তার অভিব্যক্তি। তার জন্য NDTV কোনো ভাবেই দায়ী নয়। এর জন্য NDTV কোনো ভাবেই জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়.
Suman Chakraborty
© Copyright NDTV Convergence Limited 2025. All rights reserved.