বৃহস্পতিবার মহানবমী। গোটা কলকাতা শহর তাদের এ বছরের সবথেকে সুন্দর পোশাকটা পরে মণ্ডপ ও প্রতিমা দর্শনে বেরিয়ে পড়েছে। আজই দুর্গাপুজোর চতুর্থ দিন। এক উৎসাহী তরুণী বললেন, ‘‘ইতিমধ্যেই অনেকগুলো ঠাকুর দেখে ফেলেছি। পুজো শেষ হওয়ার আগে যতগুলো পারি দেখে নেবো। বুধবার দুপুরেই তিথি অনুযায়ী অষ্টমী শেষে নবমী তিথি শুরু হয়ে গিয়েছিল। ঢাকের বোলে বাগবাজার সর্বজনীন, সমাজসেবী সঙ্ঘের মতো বড় দুর্গাপুজোয় কুমারী পুজোও সারা। কুমারীকে সাজানো হয় লাল শাড়ি ও ফুলের গয়নায়। কপালে লেপা থাকে সিঁদুর। নবমীর মহা আরতির দিকে চোখ থাকে অনেকের। এ দিন বহু বাড়ির পুজোয় যজ্ঞ হয়।
এ দিন বহু মণ্ডপে চলে পঙক্তি ভোজন। তাতে থাকে লুচি থেকে খিচুরি, নানা সব্জি, মাছ মাংস সবই। সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক, একডালিয়া এভারগ্রিন, ম্যাডক্স স্কোয়্যারে এ বছর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এ বছর শ্রীভূমি এবং মহম্মদ আলি পার্ক পদ্মাবত সিনেমা থেকে উৎসাহ পেয়ে চিতোরগঢ়ের আদলে মণ্ডপ গড়েছে। সেখানে ভিড় হয়েছে খুবই।
আবার অনেক সিনেমা হলের বাইরেও দেখা গিয়েছে লম্বা লাইন। কথিত আছে, এই দিন দেবী সন্ধি লগ্নে চণ্ড ও মুন্ড নামে দুই অসুরকে বধ করেন। দেবীকে এ দিন ১০৮টি পদ্মফুলের পুজো দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে ভোগও।
এই পাঁচ দিন ব্যাপী উৎসবকে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বড় উৎসব বলে গণ্য করা হয়। এমনকী এই পাঁচ দিন বাংলায় খবরের কাগজও বন্ধ থাকে। দিন রাত রাস্তায় দেখা যায় ভক্ত ও দর্শর্নাথীদের ঢল। পুরাণ অনুসারে দেবী দুর্গা বছরের এই সময়ে বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এবং দুষ্টের দমন করে শিষ্টের পালনের উদ্দেশ্যে চার ছেলে মেয়ে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে নিয়ে মর্ত্যে আসেন। মহিষাসুরমর্দিনী দেবী আসেন সিংহের পিঠে চেপে। তার দশ হাতে থাকে দশ অস্ত্র। তিনি নারীশক্তির প্রতীক।
বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও পুজোয় শোলার ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু শিল্পীরা সাধারণত প্রচারের আলোর বিপরীতেই রয়ে যান।
পুজোর মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে মা যাতে এসে কালো অশুভ হাতের বিনাশ করেন। আর মায়ের সেই বিনাশ মূর্তির মধ্যে দিয়েই জেগে উঠুক নতুন প্রাণ।
পুজো প্যান্ডেল তৈরি হল এক বিশেষ দাবিকে সামনে রেখে। না কোনও রাজনৈতিক বা সামাজিক দাবি নয়, এই দাবি একেবারেই শহুরে, কলকাতাকে ভালবাসার প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শহর, কলকাতার পরিচিতি সিটি অফ জয় নামে। কিন্তু আয়োজকরা চান কলকাতা পরিচিত হোক সাহিত্যের শহর হিসেবে। তাই এবার রাজা রামমোহন সরণির চালতা বাগানের পুজোর থিম বিশ্বকবি। 76 বছরে পা দেওয়া চালতাবাগানের থিমের পোশাকি নাম কবিগুরুর শান্তিনিড়। উদ্দেশ একটাই ইউনেস্কোর থেকে স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়া।
সাদার্ন নুকের দুর্গাপুজোর এ বার ১০ বছরে পা। তবে এই আবাসনের পুজোয় এ বার রয়েছে নতুন স্পেশ্যালিটি। এ বার মায়েদের হাতেই জগজ্জননীর পুজোর ভার ন্যস্ত।
সূদূর জার্মানির বার্লিন শহরে বসেও দুর্গাপুজোর উৎসবে মাতোয়ারা একদল ভারতীয়। পুজোর আয়োজন থেকে উপকরণ কোথাও নেই এতটুকু কার্পণ্য।
পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অফ রাশিয়া ইন্টার ক্লাবে এবছর ধুমধাম করে আয়োজিত হচ্ছে মস্কোর দুর্গাপুজো। 15 অক্টোবর থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে উদযাপন। 19 অক্টোবর পর্যন্ত চলবে নানা অনুষ্ঠান।
বর্ধমানের সুমিত কোঙার। আপাতত এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিষয়ে পোস্ট ডক করছেন। বছর দুয়েক হল বিলেতে আছেন। সেখানে গিয়েই বুঝেছেন নতুন জায়গায় গিয়ে পুজোর ব্যাপারে খোঁজ খবর পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। বিলেতের এদিক ওদিকে থাকা ভারতীয় তথা বাঙালিরা জানতেই পারেন না, ঠিক কোথায় হচ্ছে পুজো। সেই সমস্যা থেকেই মুক্তি দিতেই উদ্যোগ নিলেন সুমিত।