আজ মহালয়া। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় ভোরবেলা স্ত্রোত্রপাঠ শুনে দিন শুরু করাটা বাঙালি রেওয়াজ। 85 বছর ধরে এই একটি ঐতিহ্য বাঙালি আজও একইভাবে ধরে রেখেছে। সেই অর্থে দুর্গাপুজোর আভাস মেলে এই মহিষাসুরমর্দিনীর বিশেষ বেতার অনুষ্ঠানেই। আসলে এই দিনটি তর্পণের দিন। এই দিনের সাথে দুর্গাপুজোর বা অকালবোধনের তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। বরং পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানাতেই আজ গঙ্গায় বা অন্য নদীতে অনেকে তর্পণ করেন। মহালয়া তর্পণের মাধ্যমে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটায়। সামনে পুজো বলেই তারপর থেকে বাঙালীর দেবীপক্ষ শুরু হয় অলিখিতভাবে।
দেখুন ভিডিও:
মহাভারত অনুযায়ী-
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মারা যাওয়ার পর কর্ণ স্বর্গে গেলে তাঁকে সেখানে খাদ্য-পানীয়ের পরিবর্তে শুধুই সোনা রুপোর মতো ধাতু খেতে দেওয়া হয়। কর্ণ প্রশ্ন তোলেন খাবারের এমন বিচিত্রতা নিয়ে? তাঁকে জানানো হয় তিনি আজীবন শুধু শক্তির আরাধনা করে গেছেন। কখনও নিজের পূর্বপুরুষের কথা স্মরণ করেননি, তাঁদের প্রয়াত পূর্বপুরুষদের আত্মাকে খাদ্য-পানীয় দেননি। তাই পুণ্যফলে তিনি স্বর্গে আসতে পারলেও খাদ্য-পানীয় পাবার যোগ্য বলে বিবেচিত হননি। কর্ণ উত্তরে জানান, এতে তাঁর তো কোনও দোষ নেই। তাঁর জন্ম মুহূর্তেই মা তাঁকে ত্যাগ করেন। সূত বংশজাত অধিরথ ও তাঁর স্ত্রী কর্ণকে প্রতিপালন করেন। তারপর দুযোর্ধন তাঁকে আশ্রয় দেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ আরম্ভের আগের দিন প্রথমে কৃষ্ণ ও তারপরে তাঁর নিজের মা কুন্তী এসে কর্ণের জন্ম ও বংশ পরিচয় জানিয়ে দেন। এরপর যুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং তারপর মাত্র ষোল সতের দিন তিনি বেঁচে ছিলেন। পিতৃপুরুষকে জল দেবার সময়ই পাননি। তাহলে তাঁর কী করণীয় জানতে চাইলে তাঁকে জানানো হয় আবার আবার মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জলদান করলে তবেই স্বর্গে খাদ্য-পানীয় পাবেন তিনি।
যমের (মতান্তরে ইন্দ্রের) নির্দেশে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপ্রতিপদ তিথিতে কর্ণ আবার মর্ত্যে ফিরে এসে এক পক্ষ কাল থেকে পিতৃপুরুষকে তিল-জল দান করে পাপস্খলন করেন। আশ্বিনের অমাবস্যা তিথিতে শেষ জলদান করে কর্ণ স্বর্গে ফিরে যান। এই বিশেষ পক্ষকাল সময়কে শাস্ত্রে পিতৃপক্ষ বলা হয়েছে। পিতৃপক্ষের শেষ দিন হল মহালয়া।
দুর্গাপুজো বাঙালির সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব
মহলয়ার গুরুত্ব কী?
মহালয়ার সঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে দুর্গাপুজোর কোনও যোগ নেই। এই দিনে প্রতিমার চোখ আঁকা হয় রেওয়াজ মেনে, যদিও এর পিছনে নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নেই। এই দিনটি আসলে পিতৃপক্ষের অবসানকে চিহ্নিত করে। পূর্বপুরুষদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন মানুষ। তারপরেই শুরু হয় পুজোর অপেক্ষা।
দুর্গা পুজো 2018 কখন শুরু হবে?
14 অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে দুর্গা পুজো। ওইদিন পঞ্চমী তিথি। পুজো শেষ হচ্ছে 19 অক্টোবর বিজয়া দশমীর উদযাপনের মাধ্যমে।
দেখে নিন 2018 সালের দুর্গাপুজোর তারিখ:
মহালয়া 8 অক্টোবর 2018
মহা পঞ্চমী- 14 অক্টোবর 2018
মহা ষষ্ঠী- 15 অক্টোবর 2018
মহা সপ্তমী- 16 অক্টোবর 2018
মহা অষ্টমী- 17 অক্টোবর 2018
মহা নবমী- 18 অক্টোবর 2018
বিজয়া দশমী- 19 অক্টোবর 2018
বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও পুজোয় শোলার ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু শিল্পীরা সাধারণত প্রচারের আলোর বিপরীতেই রয়ে যান।
পুজোর মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে মা যাতে এসে কালো অশুভ হাতের বিনাশ করেন। আর মায়ের সেই বিনাশ মূর্তির মধ্যে দিয়েই জেগে উঠুক নতুন প্রাণ।
পুজো প্যান্ডেল তৈরি হল এক বিশেষ দাবিকে সামনে রেখে। না কোনও রাজনৈতিক বা সামাজিক দাবি নয়, এই দাবি একেবারেই শহুরে, কলকাতাকে ভালবাসার প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শহর, কলকাতার পরিচিতি সিটি অফ জয় নামে। কিন্তু আয়োজকরা চান কলকাতা পরিচিত হোক সাহিত্যের শহর হিসেবে। তাই এবার রাজা রামমোহন সরণির চালতা বাগানের পুজোর থিম বিশ্বকবি। 76 বছরে পা দেওয়া চালতাবাগানের থিমের পোশাকি নাম কবিগুরুর শান্তিনিড়। উদ্দেশ একটাই ইউনেস্কোর থেকে স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়া।
সাদার্ন নুকের দুর্গাপুজোর এ বার ১০ বছরে পা। তবে এই আবাসনের পুজোয় এ বার রয়েছে নতুন স্পেশ্যালিটি। এ বার মায়েদের হাতেই জগজ্জননীর পুজোর ভার ন্যস্ত।
সূদূর জার্মানির বার্লিন শহরে বসেও দুর্গাপুজোর উৎসবে মাতোয়ারা একদল ভারতীয়। পুজোর আয়োজন থেকে উপকরণ কোথাও নেই এতটুকু কার্পণ্য।
পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অফ রাশিয়া ইন্টার ক্লাবে এবছর ধুমধাম করে আয়োজিত হচ্ছে মস্কোর দুর্গাপুজো। 15 অক্টোবর থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে উদযাপন। 19 অক্টোবর পর্যন্ত চলবে নানা অনুষ্ঠান।
বর্ধমানের সুমিত কোঙার। আপাতত এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিষয়ে পোস্ট ডক করছেন। বছর দুয়েক হল বিলেতে আছেন। সেখানে গিয়েই বুঝেছেন নতুন জায়গায় গিয়ে পুজোর ব্যাপারে খোঁজ খবর পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। বিলেতের এদিক ওদিকে থাকা ভারতীয় তথা বাঙালিরা জানতেই পারেন না, ঠিক কোথায় হচ্ছে পুজো। সেই সমস্যা থেকেই মুক্তি দিতেই উদ্যোগ নিলেন সুমিত।