কলকাতার খ্যাতি ভারতের সাংস্কৃতিক রাজাধানী হিসেবে। শিল্প ভাবনায় দেশের অন্য রাজ্য গুলিকে বহু আগেই পেছনে ফেলেছে কলকাতা। দুর্গা পুজোও তার ব্যতিক্রম নয়।গত এক- দেড় দশক ধরে কলকাতার বড় থেকে মাঝারি এমনকী ছোট পুজোতেও থিমের উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। দেশ বিদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি সামাজিক বার্তা তুলে ধরার চেষ্টা হয়ে থাকে। শিশু শ্রম থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধেও সরব হয় দুর্গা পুজো। এবারও সেটাই হচ্ছে। আর এবার দেখা যাচ্ছে কলকাতার নানা প্রান্তে এমন কয়েকটি থিমের পুজো হচ্ছে, যার মূল কথা একটাই – যে কোনও মূল্যে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। এই বার্তাকে সামনে রেখেই হচ্ছে পুজো।
বিধাননগরের এফডি ব্লকের পুজোয় ফুটে উঠছে ডাইনোসরাস পার্ক । আবার বেলেঘাটার সন্ধানী দিচ্ছে বাঘ বাঁচানোর বার্তা। তাদের থিমের নাম তর্জন গর্জন। ফার্ন রোড এবং পাটুলির পুজো কর্তারা বলছেন প্ল্যাস্টিক বর্জনের কথা। পূর্ব কলকাতার পুজো মানচিত্রে অন্যতম পরিচিত পুজো দমদম পার্ক সর্বজনীনের পুজো বলছে পাখিদের রক্ষা করার কথা। থিমের নাম ‘ উজান ঠেলে চালাও নাও, পাখিরা বলে মোদের বাঁচতে দাও। ’ বন্ধু মিলন ক্লাবের থিমের নাম নির্মল বাংলা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় গত এক দশক ধরে থিমের পুজোর বিবর্তন নিয়ে চর্চা করছেন। কোন কোন থিম দর্শকদের ভাল লাগছে তা বোঝার চেষ্টা করেন পরিবেশ বিদ্যার এই অধ্যাপক । তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে পুজোয় এখন আগের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে পরিবেশ সচেতনার বার্তা দেওয়া হয়। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে এটাই তাঁর মত। পরিবেশ সচেতনতার ব্যাপারটা এভাবে বাড়ানোর চেষ্টা হওয়ায় খুশি রাজয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। বহু মানুষকে একসঙ্গে পরিবেশের ব্যাপারে সচেতন করা যায় পুজোর সময়। কল্যাণের আশা এর ফল অবশ্যই মিলবে। সচেতনতা বাড়াতে এই সময়টাকে কাজে লাগায় পর্ষদও।
বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও পুজোয় শোলার ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু শিল্পীরা সাধারণত প্রচারের আলোর বিপরীতেই রয়ে যান।
পুজোর মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে মা যাতে এসে কালো অশুভ হাতের বিনাশ করেন। আর মায়ের সেই বিনাশ মূর্তির মধ্যে দিয়েই জেগে উঠুক নতুন প্রাণ।
পুজো প্যান্ডেল তৈরি হল এক বিশেষ দাবিকে সামনে রেখে। না কোনও রাজনৈতিক বা সামাজিক দাবি নয়, এই দাবি একেবারেই শহুরে, কলকাতাকে ভালবাসার প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শহর, কলকাতার পরিচিতি সিটি অফ জয় নামে। কিন্তু আয়োজকরা চান কলকাতা পরিচিত হোক সাহিত্যের শহর হিসেবে। তাই এবার রাজা রামমোহন সরণির চালতা বাগানের পুজোর থিম বিশ্বকবি। 76 বছরে পা দেওয়া চালতাবাগানের থিমের পোশাকি নাম কবিগুরুর শান্তিনিড়। উদ্দেশ একটাই ইউনেস্কোর থেকে স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়া।
সাদার্ন নুকের দুর্গাপুজোর এ বার ১০ বছরে পা। তবে এই আবাসনের পুজোয় এ বার রয়েছে নতুন স্পেশ্যালিটি। এ বার মায়েদের হাতেই জগজ্জননীর পুজোর ভার ন্যস্ত।
সূদূর জার্মানির বার্লিন শহরে বসেও দুর্গাপুজোর উৎসবে মাতোয়ারা একদল ভারতীয়। পুজোর আয়োজন থেকে উপকরণ কোথাও নেই এতটুকু কার্পণ্য।
পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অফ রাশিয়া ইন্টার ক্লাবে এবছর ধুমধাম করে আয়োজিত হচ্ছে মস্কোর দুর্গাপুজো। 15 অক্টোবর থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে উদযাপন। 19 অক্টোবর পর্যন্ত চলবে নানা অনুষ্ঠান।
বর্ধমানের সুমিত কোঙার। আপাতত এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিষয়ে পোস্ট ডক করছেন। বছর দুয়েক হল বিলেতে আছেন। সেখানে গিয়েই বুঝেছেন নতুন জায়গায় গিয়ে পুজোর ব্যাপারে খোঁজ খবর পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। বিলেতের এদিক ওদিকে থাকা ভারতীয় তথা বাঙালিরা জানতেই পারেন না, ঠিক কোথায় হচ্ছে পুজো। সেই সমস্যা থেকেই মুক্তি দিতেই উদ্যোগ নিলেন সুমিত।