হাতে গোনা অপেক্ষা আর। জাতীয় সড়কের ধারে ধারে কাশফুল, বাজারে বাজারে নতুন জামার গন্ধ, আর পাড়ায় পাড়ায় লাইট জ্বেলে প্যান্ডেলের বাঁশে বাঁশে ঠোকাঠুকি- সব ছবিগুলো মিলে যে শব্দটা গড়ে ওঠে তা হল দুর্গোৎসব। তবে স্রেফ ছবি নয়, কিছু গন্ধও জড়িয়ে থাকে বাঙালির পুজোর সঙ্গে। সবচেয়ে দামী গন্ধের নাম নস্টালজিয়া। আর এই নস্টালজিয়াকে ব্যবহার করেই পুজোর ভাবনা সাজিয়েছেন শিল্পী তন্ময় চক্রবর্তী। টলিউডের পেশাদার শিল্প নির্দেশক তন্ময় পুজোর কাজ শুরু করেছেন বছর চারেক আগে। এই বছর কলকাতার তিন খানি নামী পুজোর ভাবনার মূল কারিগর তিনিই। আহিরিটোলা সর্বজনীন, বেহালা ক্লাব এবং সল্টলেকের ইসি ব্লকের পুজোয় এবার তাঁরই শিল্প নির্দেশনার ছাপ অপেক্ষা করে রয়েছে কলকাতার মানুষদের জন্য। দেখে নিন কোন পুজোয় কী ভাবনায় সাজছে মণ্ডপ।
আহিরিটোলা সর্বজনীন- উত্তর কলকাতার পুজোর মধ্যেই বনেদিয়ানার গন্ধ লুকিয়ে রয়েছে। এককালের পুরনো রাজবাড়ির পুজোর আদলেই গড়া হচ্ছে মণ্ডপ। রয়েছে ঠাকুর দালান, পুরনো গম্বুজের আড়ালে সেজে ওঠা ঝাড়বাতির ঐতিহ্য। উত্তর কলকাতা জুড়ে এমন অনেক বাড়িতেই কাজের প্রয়োজনে শ্যুটিং হতে দেখেছেন তন্ময়। এককালের হইহই হওয়া বাড়ি বছরের অন্য দিন গুলো কেমন ম্রিয়মাণ হয়ে থাকে, শ্যুটিং দল এসে মাঝে মাঝে সেই ঘুম ভাঙায়। আর ভাঙায় পুজো। বাইরে থাকা মানুষটিও ঘরমুখো হয় উৎসবে, জৌলুস হারানো বাড়িতে ফের শুরু হয় হট্টগোল। তেমনই আস্ত দালানবাড়ি গড়ছেন তন্ময়, ফিরিয়ে আনছেন পুজোর নস্টালজিয়া। প্যান্ডেলে পা রাখতেই কানে আসবে সেই সমস্ত হইচই, সেই সমস্ত বনেদিয়ানা স্বর- অচিরেই যা আপনাকেও করে তুলবে এই রাজবাড়িরই সদস্য।
বেহালা ক্লাব- নস্টালজিয়ার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। তন্ময়ের কথায়, “নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা বাংলা ভাষার সেই মাধুর্য টেরই পাচ্ছে না। আমাদের যাপন থেকেই যেন হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণের ভাষা। রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া থেকে শুরু করে বাজারে সবজির দাম করতে গিয়েও কোথাও বাংলায় কথাই বলছি না আমরা।” আর এই ভাবনা থেকেই বাংলার বর্ণমালা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। বেহালা ক্লাবের পুজো মণ্ডপটি বোনা হয়েছে উল দিয়ে।
তাঁরই মাঝে মাঝে রয়েছে বাংলা বর্ণমালা, বাংলা শব্দের গাঁথুনি। উল আসলে এখানে বাঁধনের প্রতীক, আমাদের প্রাণের ভাষার সঙ্গে আমাদের মনের আরামকে বেঁধে রাখার নিদর্শন মাথায় রেখেই এভাবে মণ্ডপ সাজিয়েছেন তন্ময়। প্যান্ডেলের মূল দরজায় থাকছে বাংলার মনীষীদের নামের অক্ষর বিন্যাস। মন্ডপে বাজবে শোভন সুন্দর বসুর কাব্য আলেক্ষ্য। দুর্গা পুজোর মধ্যে দিয়েই আমাদের ভাষার উদযাপন করতেই উদ্যোগী হয়েছে বেহালা ক্লাব।
সল্ট লেক এসি ব্লক- সল্টলেকের পুজোয় প্রাণের আরাম এখনও বিদ্যমান। অন্য দুই পুজোর তুলনায় বাজেটে কম হলেও ভাবনায় টেক্কা দিতেই বাঁশের কেল্লা গড়ছে এই পুজো। তন্ময় জানান, দু’হাজার বাঁশ দিয়ে ছাব্বিশ ফুটের প্রবেশ দ্বার তৈরি হচ্ছে এই প্যান্ডেলের। মণ্ডপের ভিতরে থাকছে বাঁশ পাতা ও খেজুর পাতার তৈরি নানা শিল্প, ক্যানিং-এর শিল্পীরাই রাত জেগে তৈরি করছেন শিল্প সামগ্রী। আবহে থাকছে বাঁশির সুর।
প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্বে, আর দিন কয়েক পরেই শুরু হচ্ছে দেবীপক্ষ, অপেক্ষার অবসানের দিন ফুরিয়ে আসছে দ্রুত, সেজে উঠছে কলকাতা। জেগে উঠছে শিল্পের তাক লাগানো সমস্ত কাজ।
বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও পুজোয় শোলার ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু শিল্পীরা সাধারণত প্রচারের আলোর বিপরীতেই রয়ে যান।
পুজোর মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে মা যাতে এসে কালো অশুভ হাতের বিনাশ করেন। আর মায়ের সেই বিনাশ মূর্তির মধ্যে দিয়েই জেগে উঠুক নতুন প্রাণ।
পুজো প্যান্ডেল তৈরি হল এক বিশেষ দাবিকে সামনে রেখে। না কোনও রাজনৈতিক বা সামাজিক দাবি নয়, এই দাবি একেবারেই শহুরে, কলকাতাকে ভালবাসার প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শহর, কলকাতার পরিচিতি সিটি অফ জয় নামে। কিন্তু আয়োজকরা চান কলকাতা পরিচিত হোক সাহিত্যের শহর হিসেবে। তাই এবার রাজা রামমোহন সরণির চালতা বাগানের পুজোর থিম বিশ্বকবি। 76 বছরে পা দেওয়া চালতাবাগানের থিমের পোশাকি নাম কবিগুরুর শান্তিনিড়। উদ্দেশ একটাই ইউনেস্কোর থেকে স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়া।
সাদার্ন নুকের দুর্গাপুজোর এ বার ১০ বছরে পা। তবে এই আবাসনের পুজোয় এ বার রয়েছে নতুন স্পেশ্যালিটি। এ বার মায়েদের হাতেই জগজ্জননীর পুজোর ভার ন্যস্ত।
সূদূর জার্মানির বার্লিন শহরে বসেও দুর্গাপুজোর উৎসবে মাতোয়ারা একদল ভারতীয়। পুজোর আয়োজন থেকে উপকরণ কোথাও নেই এতটুকু কার্পণ্য।
পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অফ রাশিয়া ইন্টার ক্লাবে এবছর ধুমধাম করে আয়োজিত হচ্ছে মস্কোর দুর্গাপুজো। 15 অক্টোবর থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে উদযাপন। 19 অক্টোবর পর্যন্ত চলবে নানা অনুষ্ঠান।
বর্ধমানের সুমিত কোঙার। আপাতত এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিষয়ে পোস্ট ডক করছেন। বছর দুয়েক হল বিলেতে আছেন। সেখানে গিয়েই বুঝেছেন নতুন জায়গায় গিয়ে পুজোর ব্যাপারে খোঁজ খবর পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। বিলেতের এদিক ওদিকে থাকা ভারতীয় তথা বাঙালিরা জানতেই পারেন না, ঠিক কোথায় হচ্ছে পুজো। সেই সমস্যা থেকেই মুক্তি দিতেই উদ্যোগ নিলেন সুমিত।